আমাদের বন্ধুত্ব চায়ের পেয়ালা থেকে কবরের মাটি পর্যন্ত লম্বা হয়ে গিয়েছে,শুভ জন্মদিন

শুভ জন্মদিন,প্রিয় বন্ধু,

তোর মনে আছে, কত দিন আগে থেকে তোর জন্মদিনের প্রথম প্রহর আমার বাসায় আমাদের সঙ্গে হয়! অনেক অনেক বছর ধরে আমি, আমার পুরো পরিবার, তোর জন্মদিনে নানা সারপ্রাইজ় দিই। আমার শুটিং থাকলে বাচ্চারা গুছিয়ে রাখে।

সেই কবে থেকে আমাদের সকাল, দুপুর, সন্ধে, রাত, খাওয়া, ঘুম, উৎসব, প্রেম, ঝগড়া— সব যতুই দখল করতে থাকলি। তখন নিজের বোধ থেকেই বলতিস, ‘‘বন্ধু, আমি শুধু তোদের থেকে নিই, দিতে পারি না। কিছুই করতে পারি না।’’ রোজ বলতে বলতে, এক দিন তুই সে সুযোগ পেয়ে গেলি।

২০১০-এর নভেম্বরের এক রাতে হঠাৎ করে একটা ফোন। ফোনটা রিসিভ করি। ও পাশ থেকে যা শুনতে পাই,তা নেবার মতো শক্তি ছিল না আমার! আমি ফোন ছুড়ে ফেলে কী কী করেছি এখন মনে করতে পারি না। সে ছিল আমার পিতৃবিয়োগের ফোন। রাত সাড়ে ১০টা, পরের দিন হরতাল।

উত্তরবঙ্গে যাওয়া। উচিত হবে কি হবে না, সে নিয়ে নানা তর্ক চলতে লাগল! সে আলাপ তুই একাই দৃঢ় কণ্ঠে বন্ধ করে বলে দিলি, ‘‘আমরা যাচ্ছি। দাদা, খুশি ওর বাবাকে শেষ দেখা দেখবে।’’

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল, এর আগে ১৭ বছর আমি বাবাকে দেখি নাই! (জীবিত অথবা মৃত কোনও ভাবেই আমার আর দেখা হয় নাই)!

ঢাকা থেকে বার হতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার আর কুয়াশায় পথ ঢাকা। পথ হারিয়ে সেই শীতের রাতে অন্য রাস্তায় ৪ কিলোমিটার চলে যাওয়ার পরে হরতালের ভয় আর শোকের পাথর মাথায় করে আবার ফিরে আসি আমি, আমরা। সে দুঃসহতা সরিয়ে তুই সে দিন পৌঁছে দিলি আমাদের, আমার প্রাণহীন বাবার কাছে…

তার পর বৃন্দাবনের মা-বাবা, দু’জনারই শেষযাত্রায় আমাদের হাত ধরে শেষ সময় পর্যন্ত কবরস্থানে বসে থাকলি। পাশে বসে হাত ধরে অফুরন্ত শক্তি হয়ে থাকলি…।

আমাদের বন্ধুত্ব, চায়ের পেয়ালা থেকে কবরের মাটি। তোর বাবার হাসপাতালের মৃত্যুশয্যা থেকে শ্মশানের অগ্নিশিখা পর্যন্ত লম্বা হয়ে গিয়েছে বন্ধু। আমৃত্যু থাকুক সেটা…

শুভ জন্মদিন।

সোর্সঃআনন্দবাজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *