শিপ‌ইয়ার্ড থেকে জাহাজ উধাও

বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের একটি শিপইয়ার্ড থেকে মেরামতের জন্য রাখা একটি তেলবাহী জাহাজ উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ এবং জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান উভয়েই থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে।

জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের জাহাজটি কেটে ফেলেছে। এটি কাটার ভিডিও ফুটেজ এবং প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে, তদন্তের স্বার্থে এসব ভিডিও গণমাধ্যমকে দেয়া হচ্ছে না বলেও জানানো হয়।

এদিকে, শিপইয়ার্ডের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের দাবি, যারা জাহাজটি মেরামত করতে দিয়ে গিয়েছিল, তারাই জাহাজটি তাদের অগোচরে নিয়ে গেছে।

কিন্তু  শিপইয়ার্ড থেকে  বিশাল আকারের জাহাজ কিভাবে গায়েব হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ২৯শে গজারিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগরে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ড অবস্থিত। ২০২৩ সালের ২৩শে মে এই শিপইয়ার্ডে বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের মালিকানাধীন টি. টেকনাফ নামে একটি তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ মেরামতের জন্য দেয়া হয়। তিন ব্যক্তি এই জাহাজ মেরামতের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে নিয়ে আসে।

থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি মূলত জাহাজের ডিজাইন তৈরি এবং মেরামত করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজটি আনার পরে অল্প কিছু মেরামত করা হয়। বিশাল এ জাহাজটির মেরামতের বাকি কাজ করতে দুটো এয়ারব্যাগের মাধ্যমে জাহাজটিকে স্লিপওয়েতে  ওঠানোর চেষ্টা করা হয়।

কিন্তু বিশাল জাহাজটি ওঠাতে গিয়ে এয়ারব্যাগগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরো জাহাজটি সেখানে ওঠানো যায় নি। এয়ার ব্যাগগুলোর আনুমানিক দাম ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

পরে আর বাকি কাজ করতে না পেরে অপারগতা প্রকাশ করা হয় প্রতিষ্ঠানটির কাছে। সাধারণত মেরামতের কাজ শেষ হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগে না। কয়েক মাস পরে বিল পাঠানো হয়।

কিন্তু দিচ্ছি, দিবো বলে টাকা পরিশোধ না করে ওই ব্যক্তিরা টালবাহানা করতে থাকে বলে দাবি শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠানের। এরপর আবারো বিল পাঠানো হয়। জাহাজটির মেরামত এবং নোঙর খরচ বাবদ প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিল হয়।

কিন্তু কেউ যোগাযোগ করে নি বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের।

নভেম্বর -ডিসেম্বর মাসে যখন মেঘনা নদীর পানি যখন কম ছিল তখন জাহাজটি পানির ওপরে ডাঙায় ছিল।

শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, এরপরে মার্চ -এপ্রিল মাসের দিকে নদীর পানি যখন জোয়ারে বৃদ্ধি পায় তখন দুইবার জাহাজটি নিয়ে যেতে টাগবোট নিয়ে এসেছিল ওই ব্যক্তিরা। কারণ তখন জাহাজটি পানিতে ভাসছিল।

শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “ জাহাজটি পানিতে নামিয়ে দেয়ার পরে তারা বিল না দিয়ে দুইবার জাহাজটা নেয়ার জন্য টাগবোট নিয়ে আসে। ওই জাহাজে তাদের তিনজন পাহারাদার ছিল। বলছে বিল দেবে”।

“কিন্তু পানিতে নামিয়ে দেয়ার পর আর বিল দেয় নি। কিন্তু বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে জাহাজ দিয়ে দেয়ার জন্য হুমকি দেয়। আমরা বিল দিয়ে জাহাজ নিতে বলি ”।

এর মধ্যে গত ১৮ই মে রাতে তারা জাহাজটি সরিয়ে ফেলেছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

এই জিডিতে অভিযোগ করা হয়েছে, মিলন হাজী, আলাউদ্দিন ও রফিক এবং অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে জাহাজটি শিপইয়ার্ডে নোঙর থাকায় প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা বিল আসে। কিন্তু আসামিরা দিচ্ছি, দিবো বলে ঘুরাতে থাকে এবং জাহাজটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছিল।

বিল না দিয়ে বরং আসামিরা উল্টো হুমকি দিচ্ছিল বলে এই জিডিতে অভিযোগ করে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড।

১৮ই মে রাত আনুমানিক একটা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে শিপইয়ার্ড সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে জাহাজটি তাদের অগোচরে আসামিরা নিয়ে যায় বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মি. হক বলেন, “ ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা ও করবো ”।

সোর্সঃ বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *