মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে৷ এখন সেই সেনাবাহিনীর পক্ষেই লড়তে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করা হচ্ছে ।
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ মিয়ানমারে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়তে বাংলাদেশ থেকে কয়েকশ রোহিঙ্গা পুরুষ ও ছেলে নিয়োগ দিয়েছে৷জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার সংগঠনের এক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশ থেকে ‘কয়েকশ’ রোহিঙ্গা নিয়োগ দিয়েছে৷
‘আরাকান আর্মি আমাদের মানুষদের অত্যাচার ও খুন করেছে,” এএফপিকে বলেন আরএসওর রাজনৈতিক প্রধান কো কো লিন৷ ‘‘তাদের একমাত্র নীতি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নির্মূল করা৷ তাই আমরা নিয়মিত রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দিয়ে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছি৷”
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থু খা তিনটি সংগঠন- আরএসও, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরসা এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি বা এআরএর- বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন৷ তিনি বলেন, জান্তা বাহিনীর ‘পাশাপাশি লড়ার’ আগে নিয়োগপ্রাপ্তদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের থমাস কিয়ান এএফপিকে বলেন, ১৪ বছরের শিশুকেও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে৷ তিনি এও জানিয়েছেন যে, অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় যুদ্ধে গিয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে, কারণ, জান্তা সরকার তাদের ‘বেতন এবং এমনকি নাগরিকত্ব’ দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছে৷
আরাকান আর্মি কী?
২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী৷ আরাকান আর্মি এর মধ্যে একটি৷ চলতি বছর আরাকান আর্মির কাছে অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী৷
আরাকান আর্মি বলছে, তারা রাখাইন রাজ্যে রাখাইনদের আরও স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়ছে৷ বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা ঐ রাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন৷ এখনো ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা সেখানে বাস করেন৷
মাসে আরাকান আর্মি রাখাইনের বুথিডং শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে৷ এলাকাটি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা রোহিঙ্গা৷
বিদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গ্রুপ এক বিবৃতিতে বলেছে, আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের পালাতে বাধ্য করেছে, এরপর তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং লুটপাট চালিয়েছে৷ তবে আরাকান আর্মি এই অভিযোগকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷
রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারগুলো যা বলছে
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সফুরা বেগম এএফপিকে জানান, তার ১৫ বছরের ছেলে আব্দুলকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ঘর থেকে ধরে নিয়ে গেছে৷ ‘‘তারা আমাকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেছে,” সফুরা বলেন৷ ‘‘তারা আমাদের হুমকি দিয়েছে… আমি চাইনি আমার ছেলে যুদ্ধে যাক৷ কিন্তু আমরা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ছিলাম৷”
প্রতিশোধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে এএফপিকে জানিয়েছেন, আরসা তার ২০ বছরের ছেলেকে নিয়ে গেছে৷ তাকে সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ করতে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি৷ ‘‘শুনতে পেয়েছি যে, সে (ছেলে) যুদ্ধে আহত হয়েছে” এএফপিকে বলেন ঐ ব্যক্তি৷ ‘‘এটা লজ্জাজনক যে আমার ছেলেকে জোর করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে… প্রতিদিনই আমাদের মানুষদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,” বলে জানান ঐ ব্যক্তি৷
রাখাইন রাজ্যের বিশাল অংশজুড়ে মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন রোহিঙ্গা গ্রুপ ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা কেমন কাজ করছে তা জানা কঠিন৷
সোর্সঃএএফপি