তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদেরছবি: তানভীর আহমেদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোনো বিদেশি শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে দেশের জনগণ। এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ শুক্রবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা কোনো বিদেশি শক্তির পরোয়া করেন না। তিনি পরোয়া করেন বাংলাদেশের জনগণকে।
প্রতিবেশী দেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ন্ত্রণ করে—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নাকি প্রতিবেশী দেশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফখরুল সাহেব, শেখ হাসিনাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি জয় বাংলার চেতনা। আমাদের দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি নয়, নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশের জনগণ। আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশের সংবিধান। এই সংবিধানের বাইরে আমরা যাব না। আজকে যত ষড়যন্ত্রই করুক, যত বিদেশি শক্তির নামে হুমকি-ধমকি দেওয়া হোক।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৮ অক্টোবর পল্টনের সমাবেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছেন বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করছে। আমি তাকে বলতে চাই, বন্দী মুক্তির কথা বলেন, লজ্জা করে না? জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের ৬২ হাজার নেতাকে জেলে রেখেছিলেন। আপনাদের কতজন জেলে আছে? তিন হাজার আমাদের নেতা-কর্মী ও সরকারি অফিসারকে গুম করেছিলেন জিয়াউর রহমান।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, এটা সত্যি নয়। ১১ হাজার স্বাধীনতাবিরোধী কারাগারে ছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদের মুক্তি দিয়েছিলেন। যার মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল ৭১৩ জন।’ বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই ইতিহাস ভুলে গেছেন? কথায়–কথায় আজকে বলেন, কারাগার। আমি কি মিথ্যা বলেছি? জিয়াউর রহমান কী করেছিলেন, এর প্রমাণ আছে।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যেন নিজেদের শত্রু নিজেরা না হই। আপন ঘরে যাদের শত্রু, তাদের শত্রুতা করার জন্য বাইরের শত্রুর দরকার নেই। মুখে বলবেন বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা। তাদের জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।’
‘মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অপকর্ম যাঁরা করেন, শুদ্ধ হয়ে যান। মনে করেছেন চুপচাপ আছে, কেউ শাস্তি পাচ্ছে না কেন? শাস্তি পাবে। গত নির্বাচনে ৭৫ জন এমপি মনোনয়ন পায়নি। এটাও শাস্তি। এখানে সব শেষ নয়। শাস্তি দেওয়ার অনেক সময় আছে। সময়মতো হিসাব হবে। কেউ রেহাই পাবেন না।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘দল করলে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলবেন। ঘরের ভেতর ঘর করবেন না, মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না। শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যাঁরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবেন, তাঁদের অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। শেখ হাসিনার শাস্তি একটু ভিন্ন রকম। যাঁরা শাস্তি পেয়েছেন, তাঁরা ঠিকই বুঝেছেন। যাঁরা পাননি, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে মুক্তিযুদ্ধের হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধের প্রত্যাবর্তন বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ১৭ মে আদর্শের প্রত্যাবর্তন। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। শেখ হাসিনা সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও জাহাঙ্গীর কবির নানক; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম; কবি নির্মলেন্দু গুণ; শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ; শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলিমের মেয়ে নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ।