বাংলাদেশের সঙ্গে যে ‘বিশেষ অংশীদারত্ব’ রয়েছে তা ‘গভীর ও জোরদার’ করতে, ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রী শনিবার (২২ জুন) দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিস্তৃত সহযোগিতার সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
শুক্রবার (২১ জুন) নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “এই সফর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই পক্ষেরই প্রত্যাশা অনেক, কারণ সম্পর্কটি বিশেষ ও বন্ধুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরো বলেন, যেসব আলোচনা, সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হতে যাচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আগামীকাল (২২ জুন) সকলেই বিস্তারিত জানতে পারবে। তবে উভয় পক্ষই এই বিশেষ অংশীদারত্বকে আরো গভীর ও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান মুখপাত্র।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শুক্রবার (২১ জুন) ২ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর, এটাই প্রথম দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফর বলে জানান রণধীর জয়সওয়াল।
সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ছাড়াও, দেশটির প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়া আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ২৯ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে, দুপুর ২টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী কীর্তিবর্ধন সিং এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।
এরপর দেশটির ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানো হয়। শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে, সড়কের দুই পাশে বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা এবং শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর ছবিসহ প্ল্যাকার্ড দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
এ সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হবে এবং ঢাকা ও নয়াদিল্লি বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করতে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করা হবে। এছাড়াও দুই দেশের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার (২২ জুন) সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয়া হবে। সেখানে শেখ হাসিনাকে গার্ড অফ অনার দেয়া হবে।
এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখানে পরিদর্শন বইয়ে সই করবেন তিনি। একই দিনে হায়দরাবাদ হাউসে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে, উভয় প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ বিবৃতি দেবেন।
এরপর হায়দ্রাবাদ হাউসে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন তারা। বিকালে, সচিবালয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
একই দিন, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট দিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করে রাত ৯টায় ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে।
সোর্সঃভিওএ