দেশের মুদ্রা সরবরাহ কত হবে, টাকার মান কতটা বাড়বে, মূল্যস্ফীতির হার কত রাখা হবে—এ সবই ঠিক করেন গভর্নর। দেশের মানুষের জীবনযাপনের মান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তাঁর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে অনেকটা। কোনো দেশই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদের জন্য রাজনৈতিক পরিচয় বা সমর্থনকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকেই বিবেচনা করা হয়।
দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে। খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরও বেশি—১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির এই চিত্র ১৩ বছর ৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ঠিক এ রকম সময়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩তম গভর্নরের দায়িত্ব পেয়েছেন বিশিষ্ট গবেষক আহসান এইচ মনসুর। আজ রাত ১০টা ৪০ মিনিটে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর যোগাযোগ করা হলে আহসান এইচ মনসুর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সরকারকে ধন্যবাদ। নতুন দায়িত্ব, কিছুটা চ্যালেঞ্জিংও বটে। তবে সবাইকে নিয়েই আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব।’
অন্য সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অন্যতম প্রধান কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এত বছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে তেমন মনোযোগী হতে দেখা যায়নি।
সরকারের পতনের পাঁচ দিন পরপর ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০২২ সালের ১২ জুলাই। দুই বছরের বেশি সময়ে ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম, খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার রোধ এবং ডলার-সংকটের সমাধানে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে তাঁর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সমালোচনার মুখে ছিল।
সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৭ বছর নির্দিষ্ট থাকায় বিদ্যমান বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী আহসান এইচ মনসুর গভর্নর পদে নিয়োগ পেতে পারেন না। কারণ, তাঁর বয়স এখন ৭২ বছর ৮ মাস। সে জন্য তাঁকে নিয়োগ দিতে সরকারকে ওই অর্ডার সংশোধন করতে হয়েছে। এতে গভর্নর পদের বয়সসীমা তুলে দেওয়া হল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মঙ্গলবার রাতে আহসান মনসুরকে নিয়োগ দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তার আগে এ বিভাগের তৈরি করা এ–সংক্রান্ত ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
অনুমোদন পাওয়ার পর আগে অধ্যাদেশ জারি হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হয় ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আবদুর রহমান খান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন শেষে নতুন গভর্নর নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।’
আগেও একবার গভর্নরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করা হয় সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের জন্য, যা ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।
নতুন গভর্নর নিয়োগের উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী। তিনি বলেন, ‘বয়স কোনো ব্যাপার না। আগেও একবার অর্ডার সংশোধন করা হয়েছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই এখন প্রধান কাজ। সে কাজের জন্য এখন দরকার একজন উপযুক্ত লোক। আহসান এইচ মনসুর পারবেন বলে আস্থা রাখছি।’