বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলের নতুন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে ভারত

বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করতে, রেলপথে যোগাযোগ গড়ে তোলার ভারত সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।মঙ্গলবার (১৮ জুন) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই উদ্বেগের কথা জানান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রবিবার (১৬ জুন) টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে বিদ্যমান রুটের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলপথের একটি বিকল্প নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে যাচ্ছে ভারত। এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি।

“শিলিগুড়ি করিডোরের ২২ কিলোমিটার পথ বাইপাস করে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেললাইন বসানো হবে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে;” বলেন রিজভী।

তিনি আরো বলেন, “নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ‘ডামি সরকারের’ প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই এসব ঘটনা ঘটছে। এটা উদ্বেগজনক। আমরা এ ধরনের উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

রিজভী আরো বলেন, ভারত প্রতিদিন সীমান্তে ‘বাংলাদেশিদের হত্যা’ করছে। বাংলাদেশিদের মানবাধিকার এবং মানবিকতা উপেক্ষা করে ভারত যদি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহন করে, তা হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব হবে।

“এই সংযোগ স্থাপনের (রেল নেটওয়ার্ক) মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চাবিকাঠি তাদের দেয়া হবে, যারা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বৈরী মানসিকতা পোষণ করে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে স্বাধীন দেশের গোয়েন্দা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে;” বলেন রিজভী।

জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে রেল যোগাযোগের উদ্যোগ বাস্তবায়ন থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহবান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ক্ষমতা আঁকড়ে’ থাকার জন্য ভারতের সঙ্গে অনেক ‘গোপন চুক্তি’ করেছেন; এখন স্বাভাবিকভাবেই এসব চুক্তি সামনে আসছে। “জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে শেখ হাসিনা শুধুমাত্র নিজের অবৈধ ক্ষমতা নিশ্চিত করতে দেশের অভ্যন্তরে রেললাইন নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছেন। কারণ তিনি একটি ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন”

রিজভী আরো বলেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক-কে ‘প্রভু-সেবক’ সম্পর্কের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, “ভারতকে উদারভাবে সব দেয়ার পরিণতি হবে ভয়াবহ।”

উল্লেখ্য যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী ২১ জুন দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২২ জুন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে আলোচনায় থাকতে পারে প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়।

আলোচনায় আরো বিষয় থাকতে পারে, সেগুলো হলো; আন্তঃসীমান্ত সংযোগ উদ্যোগ, তিস্তা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগ, মোংলা বন্দরের ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ বাণিজ্য। এছাড়া একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সোর্সঃ-ভিওএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *