পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই-ড.ইউনূস

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ী মামলা করেছে।

দুদকের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আজ রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেছেন।

এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘এই প্রথম লোহার খাঁচায় কাঠগড়াতে দাঁড়াতে হলো। এটা একটা দেখার মতো দৃশ্য। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা যে লোহার খাঁচার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি আদালতের কাঠগড়ায়। এ অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নোবেল পুরষ্কারের কথা সবাই জানি। দুটো নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল। একটা আমার নামে, আরেকটা গ্রামীণ ব্যাংকের নামে। দুটোরই সম্মান মর্যাদা। এটা যৌথভাবে দেওয়া হয়েছে তাও না, দুটোই ইনডিপেন্ডেন্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নজির নাই যে, এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ী মামলা করেছে, দুদকে হাজির হয়েছে।

এটা আমাদের কপালে হয়েছে, এটা অভিশাপের একটা অংশ। এই অভিশাপ আমরা বহন করে যাচ্ছি।’

‘এটা এমন হয়েছে যে পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতো দুই নোবেল বিজয়ী, আমার কারণে যেটা সৃষ্টি হয়েছে, নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে সেটাও আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে, কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে এমনভাবে নিয়ে আসল, খুব কঠিন ভাষায়, রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করল,’ বলেন ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করে অভিযোগ করল, যে অভিযোগের ভিত্তি নেই। ঘটনার মধ্যে কোনো সত্যতা তো নেই, যে জিনিস দিয়ে দিয়েছিলাম, সেটার জন্যই আমাকে অভিযুক্ত করা হলো যে অনেক টাকা মেরে দিয়েছি ইত্যাদি।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘এ পর্যন্ত যত অভিযোগ এসেছে আমার বিরুদ্ধে এবং আমার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে, এটা আমার মনে কঠিনভাবে দাগ কেটেছে, কষ্ট লেগেছে কারণ আমার পরিবারকে আক্রমণ করেছে। কেন আমাদের এ অভিশাপ বহন করতে হচ্ছে, সেটা আমাদের আইনজীবী বলবেন।’

‘বহুদিন গেছে আমাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কোনো নিস্তার নেই, একটার পর একটা চলছে। অভিশপ্ত জীবনের একটা বড় পর্যায়ে পৌঁছে গেছি,’ যোগ করেন তিনি। 

কেন এই অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছেন, জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটা দেব-দেবীর ইচ্ছা। এখানে আমার কিছু করার নেই। দেব-দেবীরা ঠিক করেন যে একে অভিশাপ দিতে হবে, অভিশাপ দিয়েছে আমাকে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে হবে।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, কেন কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হবে? আমার সহকর্মীরা তাদের জীবন দিয়ে দিয়েছে মানুষের উপকারের জন্য, তাদের কেন হেনস্তা করতে হবে। তাদেরকে লোহার খাঁচায় কেন ঢুকতে হবে।’     

আজ শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন দুদকের করা অর্থ আত্মসাতের মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ আগামী ১১ জুন নির্ধারণ করেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলাম ড. ইউনূসসহ ১৪ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

উল্লেখ্য, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে গত ২৬ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ দায়ের করে গ্রামীণ ব্যাংক। অভিযোগে বলা হয়, নিজের মালিকানাধীন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনকে বহুবিধ অবৈধ সুবিধা প্রদান করেছেন ড. ইউনূস।

সোর্সঃডেইলিস্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *