বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে যে অস্থিরতা চলছে তা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও উন্নতি হয়নি। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে উল্টো অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নেতিবাচক হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিক পতন হওয়ার মতো পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে দেশটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির পর বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশেষ করে ডলার সংকট তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ বড় ধরনের পতনের মুখে পড়ে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা কোনো ভালো ফল আনতে পারেনি। উল্টো বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষ করে দীর্ঘদিন ডলারের দাম ধরে রাখার পর যখন একনাগাড়ে বাড়তে থাকে, তখন মূল্যস্ফীতি হুহু করে বেড়ে যায়। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলে রপ্তানিমুখী শিল্প ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়; এতে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যায় এবং প্রবৃদ্ধির গতি থমকে দাঁড়ায়। ফলে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
ক্রলিং পেগ কতটা কাজ করছে
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সবশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ডলারের একটি মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের এর আশেপাশে দর ঠিক করে লেনদেনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এক লাফে ডলারের দর ১১০ থেকে ১১৭ টাকায় উঠে যায়। বাজারভিত্তিক দর নির্ধারণের অন্তর্বর্তীকালীন সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে জানিয়ে গত ৮ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখানে ক্রলিং করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এটি কীভাবে কাজ করবে, তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এর কার্যকারিতা নিয়ে মন্তব্য করার তেমন সুযোগ নেই।
ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে কতটা সহায়ক হবে– তা এখনই বলা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ক্রলিং পেগে নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। শুধু একটি মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “এখানে ক্রলিং করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এটি কীভাবে কাজ করবে, তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এর কার্যকারিতা নিয়ে মন্তব্য করার তেমন সুযোগ নেই। বাজারে এটি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা দেখতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতির তেমন কোনো সফলতার গল্প নেই।”
খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেট-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন একটি দর নির্ধারণ করা হয়েছে; যা আগে থেকেই বাজারে অনানুষ্ঠানিকভাবে চলছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দর ৭ টাকা বেড়ে যাওয়া ছাড়া ভিন্ন কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্রলিং পেগের মধ্যে দরের থেকে ১ টাকা বেশি বা ১ টাকা কম দরে লেনদেনের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে যুক্ত বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, “যখন দাম বেশি ছিল তখন ১০৯-১১০ টাকায় ধরে রাখা হয়েছে; এখন প্রতিনিয়ত নামছিল, তখনই এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে।”
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি এস এম জামান বলেন, “বাজারে কখনোই ডলারের সংকট ছিল না, জোগানের ঘাটতি ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এতদিন দর আটকে রেখেছিল, তাই মানুষ ডলার বিক্রি করেনি। ফলে কার্ব মার্কেট অস্থির ছিল। যখন অনানুষ্ঠানিকভাবে বেশি দরে ডলার বিক্রি হচ্ছিল তখনই জোগান বৃদ্ধি পায়। এতে বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দর বাড়ানো হয়েছে; এর প্রভাব বুঝতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।”
বর্তমানে বাজারভিত্তিক দর পর্যালোচনা করে একটি দর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারের চাহিদার আলোকে মূল্য নির্ধারিত থাকলে ওই বিনিময় হারের ওপর ভিত্তি করে বৈদেশিক লেনদেন বৃদ্ধি পায়। আমরা আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে বাজার স্টেবল হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, “বর্তমানে বাজারভিত্তিক দর পর্যালোচনা করে একটি দর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারের চাহিদার আলোকে মূল্য নির্ধারিত থাকলে ওই বিনিময় হারের ওপর ভিত্তি করে বৈদেশিক লেনদেন বৃদ্ধি পায়। আমরা আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে বাজার স্টেবল হবে।”
তবে মিড রেটের কতটুকু নিচে বা উপরে উঠতে পারবে, সেটি নির্ধারণ করা নেই কেন– জানতে চাইলে মেজবাউল হক বলেন, “এটা নির্ভর করবে মার্কেটের ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের ওপর। যদি বাজার উপরে ওঠে তখন মিডরেট সমন্বয় করা হবে।”
ক্রলিং পেগ ও ডলার বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটা ইতিবাচক মত দিচ্ছেন কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান ও ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, “বর্তমানে আন্তঃব্যাংক লেনদেন বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। তবে পণ্যের বর্ধিত দামের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এলসি চাহিদা কমে গেছে। ডলার সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।”
দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা জানান, ডলার পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও ভালো হবে বলেই মনে করেন তারা।
তবে, ব্যাংকগুলোর ডলার মজুত-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে ব্যাংকে ডলার মজুত ক্রমাগত কমছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিছুটা বাড়ার পর গত সাত মাসে মজুত ১১৩ কোটি বা ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে।
হুন্ডির তৎপরতা কমছে না কেন
বিপুল সংখ্যক কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে এবং প্রণোদনা দিয়েও রেমিট্যান্সের গতি বাড়ানো যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে হুন্ডি বা অবৈধ পথে রেমিট্যান্সের অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া। নানা পদক্ষেপ নিয়েও এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা না কমলে হুন্ডির চাহিদ কমবে না।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “বিনিময় হার ঠিক করতে হবে। কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ইন্টার ব্যাংক মার্কেটের পার্থক্য যাতে বেশি না হয়, সেটি দেখতে হবে। বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।”
হুন্ডি নির্মূল করা কোনো দেশের পক্ষেই হয়তো সম্ভব নয়। তাই কীভাবে এর প্রভাব কমানো যায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু পাচার নয় বরং অনলাইন বেটিং ও বিভিন্ন অবৈধ ট্রেডিংয়ের কারণেও হুন্ডির চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাহায্যে বিপুল অর্থ হুন্ডিতে পাচার হচ্ছে।
অন্যদিকে বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারে হুন্ডির চাহিদা সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে দেখা হয়। পণ্যের দাম ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বা কম দেখিয়ে বিপুল অর্থ পাচার হয়; যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ধরা পড়ে। এ পদ্ধতিতে মাসে অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছিল দীর্ঘ সময় ধরে। তবে বর্তমানে এটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সহজ ও দ্রুততার সঙ্গে টাকা পাওয়ার কারণে তারা হুন্ডির আশ্রয় নেন। তবে কেউ কেউ বেশি দর পেয়েও হুন্ডি করেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বসবাস করেন নোয়াখালীর বাসিন্দা মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, “আমার স্বামী যখন সৌদি আরব থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান তখন আসতে দুই-তিন দিন সময় লাগে। অথচ আমার প্রতিবেশী খুব সহজে দ্রুত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি করেন।”
ভোলা জেলার বাসিন্দা দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী ইসমাইল বলেন, “হুন্ডিতে রেট বেশি হওয়ায় অনেকেই ব্যাংকে পাঠাতে চায় না। কিন্তু আমি এবং আমার সহকর্মীরা ব্যাংকেই পাঠাই।” তবে ব্যাংকে পাঠাতে সময় লাগার পাশাপাশি হুন্ডির চেয়ে কিছুটা নিয়মের ঝামেলা আছে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে শিগগিরই ডলার বাজার স্থিতিশীল হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা খরচের যে চাপ রয়েছে তাতে পরিস্থিতি দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বর্তমানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল অর্থ পরিশোধের চাপ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত আছে বাণিজ্যের বকেয়া অর্থ এবং বিদেশি কোম্পানির মুনাফার অর্থ। গবেষণা সংস্থা সিপিডির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। তাছাড়া বিদেশি বেশ কিছু কোম্পানি তাদের মুনাফার অর্থ নিতে পারছে না ডলার সংকটের কারণে। একাধিকবার আবেদন করেও তারা মুনাফা নিতে পারেনি বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য নাকচ করে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, “কোনো বিদেশি কোম্পানি তাদের মুনাফার অর্থ নিতে পারছে না– এমন কোনো তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল বাবদ চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জুলাই-মার্চ সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন বা ২৫০ কোটি ডলার। আর আগামী ডিসেম্বর-২০২৪ পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে আরও ১. ৬৪ বিলিয়ন বা ১৬৪ কোটি ডলার।
ব্যবসা-বাণিজ্যে ডলারের মূল্যের প্রভাব
গত দুই বছরে আমাদের ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। কিন্তু ডলার ব্যবসা করে ব্যাংকগুলো হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে।
ডলারের দর বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের পরিচালন ব্যয় বেড়ে গিয়ে বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা কমে যাচ্ছে। আবার বর্ধিত মূল্যে ডলার কিনে এলসি খুলতে হচ্ছে ফলে অনেক ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা কর্মী ছাঁটাই করতে হচ্ছে।
কাঁচামাল আমদানিতে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে জানিয়ে মো. হাতেম বলেন, “আমাদের ব্যবসায়ীরা ডলারের অভাবে সুতা কিনতে পারছে না। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, বাংলাদেশের শিল্পকারখানা বন্ধ করে অন্য কোনো দেশের বাজারে পরিণত করা হচ্ছে কি না?”
অর্থ পাচারের সঙ্গে ভালো ব্যবসায়ীদের কোনো সম্পর্ক নেই– জানিয়ে পাচারকারীর তালিকা প্রকাশ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “কাঁচামাল আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে– এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
চীনের মুদ্রার ঋণ কী প্রভাব তৈরি করবে
বাংলাদেশকে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে ঋণ দেওয়ার একটি প্রস্তাব রয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। এটি বিবেচনা করছে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি হননি সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন এর প্রভাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। তবে বর্তমান ডলার সংকটের মধ্যে এ ঋণ সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ঋণের ধরন ও শর্ত নিয়ে বিশদ পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ প্রসঙ্গে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “নিজেদের মুদ্রার আধিপত্য বাড়াতেই চীন এ প্রস্তাব করেছে। তবে বাংলাদেশের উচিত ঋণের শর্ত, সুদের হার এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বিশদ পর্যালোচনা করা।”
অফসোর ব্যাংকিং জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টা
ডলারের জোগান বাড়াতে অফসোর ব্যাংকিং কার্যক্রম সক্রিয় করছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। প্রবাসী বাংলাদেশীদের এতে আকৃষ্ট করতে বিশেষ প্রডাক্ট চালু করেছে কয়েকটি ব্যাংক। এ বিষয়ে প্রবাসের মাটিতে বিশেষ প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে এ সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এর আগে গত ৫ মার্চ কর ছাড়সহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে অফসোর ব্যাংকিং আইন সংসদে পাশ হয়েছে। আইনে বিনিয়োগের সুরক্ষা দিতে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাই আশা করা হচ্ছে আগামী দিনগুলোতে অফসোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডলারের জোগান বাড়বে।
বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ রয়েছে, ২৪.০৯ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ রয়েছে ১৮.৬০ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য বলছে, বর্তমানে ব্যয়যোগ্য নিট রিজার্ভ রয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম। নিয়ম অনুযায়ী, আইএমএফের এসডিআর হিসেবে থাকা ডলারসহ সব ধরনের দায়দেনা বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী আগামী জুন মাসের শেষে নিট রিজার্ভ থাকতে হবে ১৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার।