ইউরোপে আবারও সক্রিয় আইএস

আইএসের সক্রিয়তার সর্বশেষ উদাহরণ হলো জার্মানির সোলিংগেনে ছুরি নিয়ে আক্রমণের ঘটনা। আইএস তার দায় স্বীকার করেছে।

আইএসের মুখপত্র আমাক জানিয়েছে, ফিলিস্তিন ও অন্যত্র মুসলিমদের উপর যে আক্রমণ হচ্ছে, ”তার প্রতিশোধ নিতে একদল ক্রিশ্চানকে” টার্গেট করা হয়েছে।

ভায়োলেন্স প্রিভেনশন নেটওয়ার্কের(ভিপিএন) থমাস মুকা বলেছেন, ”চরমপন্থিরা মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতকে ব্যবহার করে তাদের কার্যকলাপ বাড়াতে চাইছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে আক্রমণ চালিয়ে প্রচুর ইসরায়েলিকে হত্যা করে। তারপর ইসরায়েল গাজায় প্রত্যাঘাত করে এবং প্রচুর মানুষ মারা যান।” মুকা বলছেন, ”এরপর পশ্চিম ইউরোপে ২০২২-এর তুলনায় আক্রমণ ও আক্রমণের চেষ্টা চারগুণ বেড়েছে।”

গত কয়েক সপ্তাহে ইউরোপে একাধিক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তবে সবকটির পিছনে আইএস আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। জার্মানিতে যেদিন আক্রমণ হয়েছে, সেদিনই দক্ষিণ ফ্রান্সে একটি সিনাগগের বাইরে দুইটি গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়।

অস্ট্রিয়ার কর্তৃপক্ষ অগাস্টের গোড়াতে দুইজন সন্দেহভাজন আইএস কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা মার্কিন গায়ক টেলর সুইফটের কনসার্টে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তার প্রধান চক্রান্তকারী একজন ১৯ বছর বয়সি অস্ট্রিয়ান, যার পরিবার নর্থ ম্যাসিডোনিয়া থেকে এসেছিল। গ্রেপ্তার করার সময় সে নিজেকে ও সেইসঙ্গে প্রচুর মানুষকে মারতে চেয়েছিল বলে অস্ট্রিয়ার পুলিশ জানিয়েছে। পরে ওই কনসার্ট বাতিল করা হয়।

মে মাসের শেষের দিকে জার্মানিতে বসবাসকারী এক আফগান একজন পুলিশ অফিসার-সহ পাঁচজনকে আক্রমণ করে। পুলিশ অফিসার গুরুতর আহত হন। প্যাক্স ইউরোপের চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে এই আক্রমণ চালানো হয়েছিল। এই সংগঠন ইসলামের সমালোচক। আইএসের সঙ্গে এই আক্রমণের সরাসরি যোগাযোগ পাওয়া যায়নি, তবে তদন্তকারীরা জানায়, এই আক্রমণ ‘ধর্মীয় কারণে’ করা হয়েছিল।

এই ধরনের আক্রমণ বাড়তে থাকায় জার্মানি ও ফ্রান্সে কর্মকর্তারা রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েন। জার্মানিতে ইউরো কাপ ও ফ্রান্সে অলিম্পিক নিয়ে তাদের চিন্তা ছিল। তবে দুইটি ইভেন্টেই শান্তি বজায় ছিল। তবে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল এবং সীমান্তেও নিয়ন্ত্রণ জারি ছিল।

২০২৩-এর ৭ অক্টোবরের পর পশ্চিম ইউরোপে সাতটি আক্রমণের ঘটনায় ২১ জন মারা গেছেন। মুকা মনে করেন, আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়াটা খুব অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়। তিনি বলেছেন, ”আইএস পশ্চিম ইউরোপকে টার্গেট করেছে। তাদের ইচ্ছা, এখানে মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া এবং সমাজকে বিভক্ত করা, যাতে তারা আরো মানুষকে তাদের কাজে যুক্ত করতে পারে।”

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আইএসের সবচেয়ে বড় আক্রমণ পশ্চিম ইউরোপ নয়, রাশিয়ায় হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে কনসার্ট হলে আইএসের আক্রমণে ১৪০ জন মারা গেছেন। আমাক তখন জানিয়েছিল, ”ইসলামিক স্টেট সেনারা ক্রিশ্চানদের একটা বড় জমায়েতে আক্রমণ করে শতাধিক মানুষকে মেরেছে বা আহত করেছে”।

২০১৯ নাগাদ অনেকে মনে করেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আইএসকে হারানো সম্ভব হয়েছে। ইউরোপেও তাদের আক্রমণ অনেক কমে যায়। কিন্তু এখন আবার যে নতুন করে আক্রমণ শুরু হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, জিহাদিরা আবার ফিরে এসেছে।

মুকা বলেছেন, ইউরোপে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের দুই তৃতীয়াংশের বয়স ১৯ বছরের মধ্যে। এমন পদ্ধতিতে তাদের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে, যা এই বয়সিদের আকৃষ্ট করে। তাদের নিয়োগ করার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটা বড় ভূমিকা পালন করছে।

অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনার কারণে আগামী বছরগুলিতেও উগ্রপন্থা বাড়বে। তারা মনে করছেন, জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ছুরিহীন এলাকা’ তৈরি করার যে পরিকল্পনার কথা বলেছেন, তাতে কাজ হবে না। তাদের মতে, কেউ যদি ছুরি নিয়ে কাউকে মারতে যায়, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা সে মানবে না।

তবে মুকা বলেছেন, ”৭ অক্টোবরের পর থেকে আমাদের কাউন্সেলিং হটলাইনে ফোন আসার সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। সেখানকার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি, প্রথম পর্যায়েই আমাদের চরমপন্থার দিকে ঝোঁক থামাতে হবে।”

তিনি বলেছেন, ”যাদের চরমপন্থায় দীক্ষিত করা হচ্ছে, তাদের চরিত্রের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে। সেটা তার পাশে থাকা মানুষেরা বুঝতে পারেন। সেটা কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করাটা খুবই জরুরি। এই সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থাকে থামানোর জন্য তরুণ প্রজন্মের সাহায্য পাওয়াটা খুবই জরুরি।

সোর্সঃ ডিডব্লিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *