প্রোটিন পাউডারের নামে কি খাচ্ছি আমরা?

যাঁরা ওজন বাড়াতে চান কিংবা যাঁরা নিয়মিত জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করেন, তাঁদের অনেকের মনেই প্রোটিন পাউডার নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। পেশীবহুল সুঠাম চেহারা পেতে এই ধরনের পাউডার খাওয়া স্বাস্থ্যকর কি না, সেই প্রশ্ন জাগে অনেকেরই মনে। অনেকে আবার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে চড়া দামের এই বাক্সবন্দি প্রোটিন পাউডারগুলি পুষ্টিবিদ কিংবা ফিটনেসবিদের পরামর্শ ছাড়াই দিনের পর দিন খেয়ে চলেছেন। এই অভ্যাস কিন্তু নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।

এক জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা দেহের ওজনের সমানুপাতিক। প্রতি কিলো ওজন পিছু দৈনিক ০.৮ থেকে ১ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, কারও ওজন যদি ৫০ কেজি হয় তবে তাঁর প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তবে যাঁরা খেলোয়াড় এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই চাহিদা কিছুটা বেশি। তাঁদের দেহের প্রতি কিলো ওজনের জন্য, দৈনিক দেড় থেকে দুই গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে, এক জন সাধারণ মানুষ যখন জিমে ঘাম ঝরান, তখন তাঁর এই অতিরিক্ত প্রোটিনের প্রয়োজন নেই। সঠিক খাদ্যাভ্যাসই দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে যথেষ্ট।

কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক জনপ্রিয় প্রোটিন পাউডার এবং শেকে রয়েছে ক্ষতিকর পর্যায়ে রয়েছে সীসার মাত্রা, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র ভোক্তা সংস্থা কনস্যুমার রিপোর্ট ২৩টি জনপ্রিয় প্রোটিন পাউডার ও শেক পরীক্ষা করে দেখেছে, এর দুই-তৃতীয়াংশ ব্র্যান্ডে সীসার মাত্রা নিরাপদ সীমার থেকেও অনেক বেশি। 

সংস্থার খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণা ও পরীক্ষার প্রধান সানা মুজাহিদ বলেন, “পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তাৎক্ষণিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, তবে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে ঝুঁকি থাকতে পারে।”

Consumer Reports-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সর্বোচ্চ সীসা পাওয়া গিয়েছে Naked Nutrition-এর Vegan Mass Gainer (৭.৭ মাইক্রোগ্রাম/সেবা) এবং Huel-এর Black Edition (৬.৩ মাইক্রোগ্রাম/সেবা) পাউডারে। অন্যান্য পাউডারে ০.৫–৩ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে সীসা পাওয়া গেছে।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যাপক ড. স্টিফেন লুবি বলেন, “এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ড. পিটার কোহেন বলেন, “প্রোটিন সাপ্লিমেন্টে সীসা এবং অন্যান্য ভারী ধাতু অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে, তাই ক্রেতাদের সতর্ক থাকা জরুরি।”

গবেষক জেনা ফোরসাইথ, যিনি স্ট্যানফোর্ডে লিড বিষক্রিয়ার উপর কাজ করেন, বলছেন, “গর্ভবতী বা গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন নারীদের এই ধরনের প্রোটিন পাউডার এড়ানো উচিত।”

ড. লুবি বলেন, “প্রোটিনের জন্য পাউডার ব্যবহার করাই ঝুঁকি সৃষ্টি করছে কি না, তা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ অন্যান্য খাবার থেকেও প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাওয়া যায়।”

১) এই ধরনের পাউডার দীর্ঘ দিন ধরে খেলে তা কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করতে পারে।

২) এই অভ্যাস মাথা ঘোরা, ক্ষুধামান্দ্য, ডায়ারিয়া কিংবা মানসিক চাপের মতো সমস্যাও ডেকে আনে।

৩) অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দ্রুত পেশি গঠন করার জন্য যে ধরনের প্রোটিন পাউডার ব্যবহার করা হয়, তাতে স্টেরয়েড জাতীয় উপাদান মিশ্রিত থাকে। এই স্টেরয়েড দীর্ঘ দিন শরীরে প্রবেশ করলে স্থূলতার সমস্যা শুরু হয়।

৪) অতিরিক্ত প্রোটিন পাউডার শরীরে ক্যালশিয়ামের ভারসাম্য বিগড়ে দেয়। এই কারণে বাতের ঝুঁকি বাড়ে।

৫) প্রোটিন হজম করতে শরীরের চাই অতিরিক্ত জল। প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

পাশাপাশি, মনে রাখতে হবে যে, কোনও ধরনের প্রক্রিয়াজাত প্রোটিনের তুলনায় প্রাকৃতিক খাবার থেকে প্রোটিন শোষণ করা দেহের পক্ষে অনেক বেশি সহজ। কাজেই প্রোটিন পাউডার খেতে চাইলে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *